ইসলামে চারটি বিয়ের অনুমতি: ন্যায়বিচারের শর্তে সীমিত একটি বিধান

ধর্ম

সিনিয়র রিপোর্টার- মোহাম্মদ তারিক উদ্দিন:- ইসলামে চারটি বিয়ের অনুমতি বহু আলোচিত একটি সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়। অনেকেই এই বিধানকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে একে নারীর প্রতি বৈষম্য কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সুবিধা হিসেবে উপস্থাপন করেন। অথচ ইসলামী শরীয়তের আলোকে এটি একটি সীমিত, শর্তসাপেক্ষ এবং মানবিক বিধান—যার মূল ভিত্তি ইনসাফ ও সামাজিক ভারসাম্য।


✅ কুরআনের নির্দেশনা: সীমা ও শর্ত

ইসলামে একাধিক বিয়ের অনুমতি কুরআনের সূরা আন-নিসা’র ৩ নম্বর আয়াত থেকে প্রাপ্ত। আল্লাহ তায়ালা therein বলেন:

“…তোমাদের জন্য হালাল যাদের মধ্যে পছন্দ করো, তাদের মধ্যে থেকে দুই, তিন ও চারজনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি আশঙ্কা কর যে ইনসাফ করতে পারবে না, তবে একজনকেই বিয়ে করো…”
— (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩)

এই আয়াত অনুযায়ী:
• একজন মুসলিম পুরুষ সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিয়ে করতে পারেন।
• কিন্তু ন্যায়বিচার/ইনসাফ করার শর্ত অপরিহার্য।
• ইনসাফের সম্ভাবনা না থাকলে একজন স্ত্রীতেই সীমাবদ্ধ থাকার নির্দেশ রয়েছে।

= হাদীসের আলোকে সীমা নির্ধারণ

নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবী গাইলান ইবনে সালামা ইসলাম গ্রহণ করার সময় দশজন স্ত্রীসহ ছিলেন। রাসূল (সা.) তাকে নির্দেশ দেন:

“তাদের সবাইকে তালাক দিয়ে চারজনকে রেখে দাও।”
— (আবু দাউদ, তিরমিযী)

এখান থেকেই স্পষ্ট, ইসলামে চারটির বেশি বিয়ে বৈধ নয়। এটি সংখ্যায় সীমিত, নিয়মে শৃঙ্খলিত।


সামাজিক ও মানবিক প্রেক্ষাপট

চারটি বিয়ের অনুমতি ছিল বিশেষ সামাজিক প্রেক্ষাপটের ফল। যেমন:
• যুদ্ধের ফলে বিধবা হয়ে পড়া নারীদের পুনর্বাসন।
• এতিম শিশুদের সহায়তা।
• নারীর নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করা।

অর্থাৎ, এটি ছিল নারী সুরক্ষার একটি দায়িত্বশীল ব্যবস্থা, কোনও ভোগবাদী সুবিধা নয়।


ইনসাফ: একটি কঠিন শর্ত

যদিও কুরআনে চারটি বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, একইসাথে সতর্ক করে বলা হয়েছে:

“তোমরা কখনোই নারীদের মধ্যে ইনসাফ করতে পারবে না, যদিও তা করতে চাও।”
— (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১২৯)

এই আয়াত ইসলামের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষের পক্ষে সমানভাবে ভালোবাসা, সময়, খরচ ও সম্মান ভাগ করা সম্ভব হয় না। ফলে অধিকাংশ আলেম একাধিক বিয়েকে দায়িত্বপূর্ণ ও বিরল প্রয়োজনের বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।


প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা
• চারটি বিয়ে ফরজ নয়: এটি একটি অনুমোদিত বিধান (Permissible), ফরজ বা ওয়াজিব নয়।
• সব পুরুষের জন্য নয়: একাধিক বিয়ের শর্ত পূরণ করতে না পারলে তা পাপের কারণ হতে পারে।
• নারী অবমাননার নয়: বরং নারীর সম্মান ও সুরক্ষায় একটি বিকল্প ব্যবস্থা।


উপসংহারঃ

ইসলামে চারটি বিয়ের অনুমতি একটি সীমিত, শর্তযুক্ত এবং মানবিক বিধান। এটি ব্যক্তিগত খেয়াল নয়, বরং সমাজের প্রয়োজন ও নারীর নিরাপত্তার প্রতি ইসলামের দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ। তবে এটি প্রয়োগ করতে হলে চাই সর্বোচ্চ ইনসাফ, ধৈর্য এবং দায়িত্বশীলতা।
“ধর্মীয় বিধান নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এর মূলসূত্র, প্রেক্ষাপট ও উদ্দেশ্য ভালোভাবে বুঝা প্রয়োজন। ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম, যেখানে দায়িত্ব ও অধিকার পরস্পর সম্পৃক্ত।”

🔎 রেফারেন্স:
• কুরআন শরীফ: সূরা আন-নিসা (৪:৩ ও ৪:১২৯)
• হাদীস: আবু দাউদ, তিরমিযী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *