
সুদীপ দেবনাথ রিমন
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গঠিত অন্তরবর্তী সরকার এবং বর্তমান পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ না করায় দীর্ঘদিন ধরে “দ্যা বিজ২৪ ডটকম” এর সাংবাদিকদের বেতনসহ অন্যান্য ভাতা দিচ্ছে না এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। বিষয়টি এখানেই শেষ নয়, বকেয়া বেতন চাইতে রাজধানীর গুলশান- ২ এ অবস্থিত কনকর্ড আই কে টাওয়ারে এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশের অফিসে গেলে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নানা অককর্মে জড়িত রিয়াজ ইসলাম বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের টাকাও পরিশোধ করছেন না বলে অভিযোগ আছে। রিয়াজ ইসলামের আতঙ্কে সাংবাদিকরা গত ১৩ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। সেখানে উল্লেখ্য করা হয়, রিয়াজ ইসলাম, এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মহাপরিচালক। “দ্যা বিজ২৪ ডটকম” এল আর গ্লোবালের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, যা রিয়াজ ইসলামের প্রত্যক্ষ নির্দেশনাতেই পরিচালিত হয়ে থাকে। উক্ত পত্রিকার সকল কার্যক্রমের ব্যয়, যেমন- অপারেশনাল খরচ ও কর্মীদের বেতন-ভাতা এল আর গ্লোবাল থেকেই বহন করা হয়। কোম্পানিটির হেড অব লিগ্যাল ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে রিয়াজ ইসলাম নিয়মিতভাবে “দ্যা বিজ২৪ ডটকম” এর সকল ব্যয় বহন করতেন। পরবর্তীতে ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন আমেরিকা চলে গেলে রিয়াজ ইসলামের নির্দেশে ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ওমর সোয়েব চৌধুরী ও জনাব সৈয়দ কামরুল হুদার (চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার) মাধ্যমে অনলাইন পত্রিকাটি পরিচালনার সকল ব্যয় বহন অব্যাহত রাখা হয়।
কিন্তু, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এল আর গ্লোবালের ব্যাংক হিসাব ৯ মাসের জন্য ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) থাকার কারণে অনলাইন নিউজ পোর্টালটিতে কর্মরত সাংবাদিকদের বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন রিয়াজ ইসলাম। সাংবাদিকরা “দ্যা বিজ২৪ ডটকম” এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে রিয়াজ ইসলাম জানান, সাংবাদিকরা যেন কাজ বন্ধ না রাখে এবং “দ্যা বিজ২৪ ডটকম”-কে সচল রাখা হয়। অতঃপর রিয়াজ ইসলামের অনুরোধে সাংবাদিকরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ অব্যাহত রাখে। রিয়াজ ইসলামের নির্দেশ মোতাবেক বর্তমানে কোম্পানিটির হেড অব লিগ্যাল ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ওমর সোয়েব চৌধুরী সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন যে, এল আর গ্লোবালের ব্যাংক হিসাব আনফ্রিজ হওয়ার সাথে সাথে সাংবাদিকদের সকল বকেয়া পরিশোধ করা হবে। এছাড়াও, তিনি রিয়াজ ইসলামের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের নির্দেশ দেন যেন তারা পত্রিকাটির কার্যক্রম বন্ধ না রাখা হয়।
কিন্তু এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও ক্ষোভজনক যে, এল আর গ্লোবালের ব্যাংক হিসাব আনফ্রিজ (অবরুদ্ধ মুক্ত) হওয়ার পরেও “দ্যা বিজ২৪ ডটকম” এর সাংবাদিকদের এ বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। এমনকি বিগত ১১ মাসের সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন, বোনাস, ম্যাগাজিন ও বিজ্ঞাপন বাবদ প্রাপ্য অর্থ এখনো পরিশোধ করা হয়নি। একাধিকবার মৌখিকভাবে রিয়াজ ইসলামের নির্দেশ মোতাবেক সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সর্বশেষ, গত ৬ আগস্ট গুলশান-২ এ অবস্থিত এল আর গ্লোবালের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি আবুল কালাম আজাদ, ব্যারিস্টার মো. ওমর সোয়েব চৌধুরী এবং চিফ ফাইনান্সিয়াল অফিসার সৈয়দ কামরুল হুদা সাংবাদিকদের বকেয়া পরিশোধ করার লক্ষ্যে রিয়াজ ইসলামের সাথে আলোচনা করবেন বলেও আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সাংবাদিকদের জানান যে, রিয়াজ ইসলাম তাদের এই বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন, যার ফলে তারা সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না।
সাংবাদিকরা মনে করে, রিয়াজ ইসলামের এই আচরণ শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, বরং এটি একটি অমানবিক কর্মকাণ্ড, কারণ “দ্যা বিজ২৪ ডটকম” এর সকল কর্মী গত দীর্ঘ ১১ মাস ধরে বিনা বেতনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন শুধুমাত্র এই আশায় যে, ব্যাংক হিসাব আনফ্রিজ হলে তাদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা মারাত্মক আর্থিক সংকটে ভুগছেন, অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারছেন না, পরিবার-পরিজন নিয়ে দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করছেন এবং দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করছেন। বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে কালক্ষেপণ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে সাংবাদিকদের জীবন-জীবিকা চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে, যা সামাজিক ও নৈতিক উভয় দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য।
বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, গত ৬ আগস্ট বৈঠকের পর থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চললেও আজ অবধি সাংবাদিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। বরং নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এল আর গ্লোবাল কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যালয় কনকর্ড আইকে টাওয়ার, গুলশান-২ এর নিরাপত্তা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে যে, সাংবাদিকরা যেন অফিসে প্রবেশ করতে না পারে, ফলে সাংবাদিকরা তাদের প্রাপ্য পাওনা আদায়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।
অতএব, এল আর গ্লোবাল বাংলাদেশ এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি যেহেতু বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদিত ও নিবন্ধিত একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান। তাই বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে বিনীত প্রার্থনা, “দ্যা বিজ২৪ ডটকম” এর সাংবাদিকদের বিগত ১১ মাসের বকেয়া বেতন, বোনাস ও অন্যান্য পাওনা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করা লক্ষ্যে- সাবিক সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।
“দ্যা বিজ২৪ ডটকম”- এ কর্মরত স্টফ রিপোর্টার সুদীপ দেবনাথ বলেন, ‘‘আমাদের সংবাদ কর্মীরা গত দীর্ঘ ১১ মাস ধরে বিনা বেতনে দ্যা বিজ২৪ ডটকম- এ কাজ করেছেন। রিয়াজ ইসলাম আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ব্যাংক হিসাব আনফ্রিজ হলে আমাদের বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ব্যাংক হিসাব আনফ্রিজ হওয়ার পরেও তিনি আমাদের বেতনসহ অন্যান্য ভাতা পরিশোধ করছেন না। ফলে দ্যা বিজ২৪ ডটকম এর সংবাদ কর্মীরা মারাত্মক আর্থিক সংকটে ভুগছেন। অনেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারছেন না। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করছেন। এ ধরনের কর্মকর্ণ্ড সামাজিক ও নৈতিক উভয় দিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য।’
এদিকে গত বছরের ১৩ জুন দৈনিক সমকাল পত্রিকায় রিয়াজ ইসলামের নানা অপকর্ম নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এল এল গ্লোবালের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘সমকালের সংবাদটি প্রচারে রিয়াজ ইসলাম আতঙ্কিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় পলাতক আছেন।’