
সিনিয়র রিপোর্টার মোহাম্মদ তারিক উদ্দিন: বিশ্বায়নের এই যুগে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ আজ যুব বেকারত্বের এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। বেকারত্ব কেবল অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, এটি সামাজিক স্থিতিশীলতার উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, যে দেশে যুবশক্তি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, সে দেশ দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে রূপ নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র তার উল্টো।
⸻
🔶 বেকারত্বের বর্তমান চিত্র: কিছু তথ্য ও পরিসংখ্যান
• আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৪ সালে যুব বেকারত্বের হার ছিল প্রায় ১১.৪%।
• বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) জানায়, ১৫-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি।
• দেশে প্রতিবছর প্রায় ২২-২৫ লাখ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করে, কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয় ১০-১২ লাখ এর জন্য।
• শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় আর্থিক স্বনির্ভরতার সুযোগ কম, ফলে সেখানে বেকারত্বের হার আরো তীব্র।
⸻
🔶 অর্থনৈতিক সমীকরণ: কেন সমস্যা ঘনীভূত হচ্ছে?
একটি সাধারণ অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা অনুসারে,
📌 বেকারত্ব (U) = শ্রমবাজারে কর্মক্ষম জনসংখ্যা – বিদ্যমান কর্মসংস্থান সুযোগ
যখন U বাড়ে, তখন জাতীয় আয় কমে, দারিদ্র্য বাড়ে, এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
📌 বিশ্লেষণ: যেসব দেশে কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়, সেখানে যুব বেকারত্বের হার তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশের উচিত হতে পারে জার্মানি বা ভিয়েতনামের মতো ডুয়াল এডুকেশন মডেল (অর্ধেক প্রশিক্ষণ, অর্ধেক চাকরি) অনুসরণ করা।
🔶 সমস্যার শিকড়: বিশ্লেষণ
1.অতিরিক্ত স্নাতক উৎপাদন, কম চাকরি
-প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে, কিন্তু তাদের সিংহভাগের কাছে বাস্তবজ্ঞান বা সফট স্কিল নেই।
2.উদ্যোক্তা মানসিকতার অভাব
-সমাজে এখনো চাকরিকেই সাফল্যের মাপকাঠি ধরা হয়।
3.ফ্রিল্যান্সিং ও আইটি সেক্টরে প্রবেশ সীমিত
-২০২৪ সালের তথ্যমতে, দেশে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার থাকলেও, বিশ্ববাজারে চাহিদা অনুযায়ী এটি অত্যন্ত কম।
4.দীর্ঘ প্রতীক্ষা সরকারি চাকরির জন্য
-BCS পরীক্ষায় প্রতি বছর ৪ লাখের বেশি আবেদন, অথচ পদের সংখ্যা মাত্র ৩,৫০০-৫,০০০।
⸻
🔶 তরুণদের করণীয়: কেবল চাকরি নয়, ‘জব ক্রিয়েটর’ হোন
- দক্ষতা অর্জন করুন: • Govt: “Digital Bangladesh to Smart Bangladesh” কর্মসূচির অংশ হিসেবে IT ও AI শিখুন। • প্ল্যাটফর্ম: Google Garage, Coursera, Udemy
- উদ্যোক্তা হন:
• ২০২৪ সালে দেশে ৭.৫ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে—যার বেশিরভাগ তরুণ।
• সফল উদাহরণ: Pathao, Sheba.xyz, 10 Minute School - স্বনির্ভরতা গড়ুন:
• হস্তশিল্প, কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ, সেবা খাত—এই তিনটি খাতেই চাহিদা বেশি এবং প্রতিযোগিতা কম। - সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ও ভলান্টিয়ারিং:
• অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে এটি অপরিহার্য।
⸻
🔶 সরকারের ভূমিকা: শুধু উদ্যোগ নয়, সমন্বয় জরুরি
• জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি হালনাগাদ করা
• কারিগরি শিক্ষা ইনস্টিটিউট বাড়ানো
• Startup Fund, Youth Bank বা Innovation Hub চালু করা
• শিক্ষা ও শিল্পের মাঝে সমন্বয় গড়ে তোলা
⸻
🔶 উপসংহার
- উদ্যোক্তা হন:
বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় তরুণদের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। বেকারত্বকে রোধ করা না গেলে “ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড” (youth opportunity) এক সময় “ডেমোগ্রাফিক ডিজাস্টার”-এ পরিণত হতে পারে। তাই এখনই সময়—নিজেকে গড়ার, বিকল্প পথ খোঁজার, এবং রাষ্ট্র ও সমাজকে সহায়তা করার। তরুণরাই পারে নিজেদের ভাগ্য বদলে দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে