
মোহাম্মাদ তারিক উদ্দিন-সিনিয়র রিপোর্টার:- বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর (Dengue Fever) একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে (জুন-সেপ্টেম্বর) বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ব্যাপক আকারে দেখা যায়। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশা (Aedes aegypti ও Aedes albopictus) কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু একটি RNA ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট, যার চারটি প্রধান সেরোটাইপ রয়েছে:
• DENV-1
• DENV-2
• DENV-3
• DENV-4
একবার এক সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে সেই সেরোটাইপের প্রতি আজীবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তবে অন্য সেরোটাইপে পরবর্তীতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
মূলত Aedes aegypti এবং কিছু ক্ষেত্রে Aedes albopictus মশা বর্ষাকালে যখন চারপাশে পানি জমে থাকে তখন জমে থাকা সচ্ছ পানিতে প্রজনন করতে পার।এজন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহুরে অঞ্চল বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী।
ডেঙ্গুর লক্ষণসমূহঃ-
১. সাধারণ ডেঙ্গু
• হঠাৎ উচ্চ জ্বর (১০৪°F পর্যন্ত)
• চোখের পেছনে ব্যথা
• মাথাব্যথা, পেশি ও গিঁট ব্যথা
• চামড়ায় ফুসকুড়ি (rash)
• বমি বমি ভাব বা বমি
২. ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF)
• নাক ও মাড়ি থেকে রক্তপাত
• ত্বকে লাল দাগ
• রক্তে প্লেটলেট কমে যাওয়া
৩. ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS)
• রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া
• অজ্ঞান হওয়া
• মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
🏥 চিকিৎসাঃ-
ডেঙ্গুর নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিকার নেই (বাংলাদেশে)।
চিকিৎসা মূলত লক্ষণভিত্তিক:
-জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল
-প্রচুর পানি পান করা
-হাসপাতালে ভর্তি (জটিল বা রক্তপাত হলে)
-অ্যাসপিরিন ও আইবুপ্রোফেন নিষেধ, কারণ এগুলো রক্তপাত বাড়াতে পারে।
📊 ২০২৫ সালের ডেঙ্গু পরিসংখ্যান (মে পর্যন্ত)
•মোট আক্রান্ত: ১,৮৯০ জন
•মোট মৃত্যু: ১৬ জন
•সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ: ১৩ জন (এর মধ্যে ২ জন ঢাকা বিভাগে, ১১ জন বরিশাল বিভাগে)
চলমান চিকিৎসাধীন রোগী: ৫৫ জন 
এই তথ্যগুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (DGHS) সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী প্রকাশিত হয়েছে।
পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় পরিবর্তন
-২০২৪ সালের একই সময়ে: ১,২২৪ জন আক্রান্ত এবং ১৮ জন মৃত্যু
-২০২৫ সালের প্রথম ছয় সপ্তাহে: ১,৪৯৩ জন আক্রান্ত এবং ১৪ জন মৃত্যু
এতে দেখা যায়, ২০২৫ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় বেশি হলেও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। 
📉সংক্রমণের বর্তমান প্রবণতা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার কমেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফেব্রুয়ারির ৮ম সপ্তাহে ৮৬টি নতুন সংক্রমণ রিপোর্ট করা হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২২.৫% কম। তবে, মৃত্যুর হার স্থিতিশীল রয়েছে
প্রতিরোধে আমাদের কি করণীয়ঃ-
ব্যক্তিগত পর্যায়ে:
-দিনের বেলা ফুলহাতা জামা-প্যান্ট পরা
-মশারি ও মশা নিরোধক ব্যবহার
-ঘরের আশেপাশে পানি জমতে না দেয়া
সামাজিক ও সরকারি পর্যায়ে:
-মশা নিধন কার্যক্রম (ফগিং, লার্ভিসাইড)
-জনসচেতনতা তৈরি
-নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
🌍আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
-ডেঙ্গু বর্তমানে ১০০+ দেশে মহামারির আকারে দেখা যায়।
-WHO ডেঙ্গুকে “High Priority Vector-Borne Disease” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
-কিছু দেশে (যেমন: ফিলিপাইন, ব্রাজিল) Dengvaxia নামের ভ্যাকসিন অনুমোদিত হলেও বাংলাদেশে এখনো ব্যবহৃত হয় না।
ডেঙ্গু বাংলাদেশে একটি নিয়মিত ও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি প্রতিরোধযোগ্য যদি ব্যক্তি, সমাজ এবং সরকার সম্মিলিতভাবে কাজ করে। সচেতনতা, দ্রুত চিকিৎসা, এবং মশা নিয়ন্ত্রণই একমাত্র উপায় এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার