
শেখ সোহেল আহমেদ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উৎপাদন মৌসুমে লেবুর ভালো দাম পাচ্ছেন না বাগানমালিকেরা। উৎপাদন ও বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে তেমন লাভ না হওয়ায় অনেক বাগানমালিক গাছ থেকেই লেবু পারছেন না। অনেক বাগানে লেবু বড় হয়ে গাছেই পেকে আছে। অনেকে গাছ থেকে লেবু নামিয়ে বাগানেই ফেলে দিচ্ছেন।
আড়ৎ দারেরা বলছেন, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় লেবুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম অনেক কমে গেছে। বাগানমালিকেরা বলছেন, লেবুর বাগান করতে অনেক খরচ। বাজারে লেবুর যে দাম, সেটি দিয়ে উৎপাদন ও শ্রমিকের খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো লোকসান গুনতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাঁরা গাছ থেকে লেবু নামাচ্ছেন না।
সরেজমিন বিভিন্ন লেবুবাগান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাগানমালিক গাছ থেকে লেবু নামাননি। গাছে গাছে হলুদ হয়ে ঝুলে আছে লেবু। কেউ কেউ লেবু পেড়ে বাজারে পাঠাচ্ছেন। কেউ আবার গাছ থেকে লেবু নামিয়ে বাগানে ফেলে দিচ্ছেন।
বাগানমালিক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ শ্রীমঙ্গলের পাইকারি বাজারে প্রতিটি লেবু গড়ে ১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যার দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ পয়সা। শ্রীমঙ্গলের খুচরা বাজারে সাধারণ মানুষের কাছে প্রতিটি লেবু ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাগানমালিক গিয়াস মিয়া বলেন, একটা লেবুবাগান করতে অনেক খরচ। এ সময়ে লেবুর উৎপাদন বেশি হয়। বাগান থেকে শ্রমিক দিয়ে একটি জিপ গাড়ি দিয়ে ২০০০ লেবু বিক্রয় করতে পাঠানো হয়, ২০০০ হাজার লেবুর মূল্য ১০০০ হাজার টাকা লেবু নামিয়ে বাজারে পাঠাতে লেবু উত্তোলন করছো প্রায় ৬০০ টাকা খরচ হয়। এখন বাজারে লেবুর পাইকারি দাম ৪০ থেকে ৫০ পয়সা দামেও বিক্রি করেছেন। বাগান থেকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচ বাদ দিলে তাঁদের কিছুই থাকছে না।
উল্টো লোকসান হচ্ছে প্রতি গাড়িতে ১৭০০শ থেকে ১৮০০ টাকা এ কারণে অনেক বাগানমালিক গাছ থেকে লেবু নামাচ্ছেন না। গাছেই লেবুগুলো পেকে নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, গাছে লেবু থাকলেও সমস্যা। তখন গাছের ফলন কমে যায়। আমরা অনেক সময় গাছ থেকে লেবু তুলে ফেলে দেই। সরকার লেবু নিয়ে চিন্তা করলে তাঁদের লোকসানে পড়তে হয় না, দেশেরও লাভ হয়।’
বাগানমালিক গিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমাদের এখানে যে পরিমাণ লেবুর উৎপাদন হয়, সেভাবে আমরা লেবুর দাম পাই না। গত এক মাসে অনেক লেবুগাছেই নষ্ট হয়েছে। লেবু পেকে গাছেই হলুদ হয়ে গেছে। আমরা তুলে ফেলে দিয়েছি। যখন দাম বাড়ে তখন অনেক বাড়ে, যখন কমে তখন একেবারে কমে যায়। এতে আমরা বাগানমালিকেরা লোকসানে পড়ি। আমরা কমে লেবু বিক্রি করলেও সাধারণ মানুষ অনেক দাম দিয়ে লেবু কেনেন। খুচরা বাজারে লেবুর দাম তো কমে না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বাগানমালিক জানান, আগে আড়তদারেরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকারদের কাছে তাঁদের লেবু বিক্রি করে দিতেন। বিক্রি বাবদ তাঁরা একটা কমিশন নিতেন। এখন বেশির ভাগ আড়তদার নিজেরা কম টাকায় লেবু কিনে পাইকারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন। এতে বাগানমালিক যেমন লোকসানে পড়েন, সাধারণ ক্রেতাদেরও দাম দিয়ে কিনতে হয়। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।