
মুহাম্মদ আল-হেলাল নড়াইল প্রতিনিধি:- পৃথিবীতে যখনই একজন মানুষ অন্যজনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে তখনই বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন নামে ডাকের প্রচলণ শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ এক ¯’স্থান থেকে অন্য ¯’স্থানে চিঠি-পত্র, টাকা-পয়শা, মাল-পত্র ইত্যাদি প্রেরণ করার জন্য ডাকের ব্যবহার করে।
অল্প কিছু দিন আগেও বাংলাদেশের মানুষের দেশে বা বিদেশে এক ¯স্থান থেকে অন্য ¯স্থানে চিঠি-পত্র, টাকা-পয়শা, মাল-পত্র ইত্যাদি প্রেরণ করার জন্য একমাত্র অবলম্বন ছিল ডাক বিভাগ। এদেশে এখন ডাক বিভাগের ন্যায় কিছু বেসরকারি সেবা চালু হয়েছে কিš‘ সেগুলো কোনভাবেই ডাক বিভাগের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি এবং হওয়ার কোন সম্ভাবনাও দেখা যায় না।
তবে অপার সম্ভাবনার এই ডাক বিভাগটি অদৃশ্য কোন কারণে তার বিদ্যমান সকল অনন্য সেবা নিয়ে মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে অবস্থান করছে। দেশের অনেক দপ্তর আছে যেটি লোকবলের অভাবে জনগনকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে‘ ডাক বিভাগ তার বিপরিত মেরুতে অবস্থান করছে কারণ এই বিভাগের লোকবল, অফিস, পরিবহন সব থাকা স্বত্তে¡ও শুধুমাত্র সরকারের সঠিক পদক্ষেপের অভাবে মৃতপ্রায় অবস্থানে দন্ডায়মান।
এই অবস্থান থেকে উত্তোরনের জন্য সরকারকে নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ। ডাক বিভাগের সমস্যা ও সম্ভাবনা বিষয়ে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে তার মধ্যে উল্যেখযোগ্য হলো: ঢাকার বাংলাবাজারে অবস্থিত সদরঘাট সাব পোস্ট অফিস থেকে একবার পাঠানো হয় বই সেই বই গন্তব্যে পৌছাতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল এক মাসের বেশি সময়। শুধু অপেক্ষা করেই পাওয়া যায়নি বইগুলো। এরমধ্যে ফেসবুকে পোস্ট, সরাসরি এবং টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়েছে ডাক বিভাগের অনেক দপ্তরে। যে পোস্ট অফিস থেকে পার্সেল পাঠানো হয় সেই পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করলে তারা শুধু অপেক্ষা করতে বলছিলেন। অপেক্ষা করতে করতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সদরঘাট সাব পোস্ট অফিস থেকে পার্সেল গুলো ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থিত পার্সেল বিভাগে যায়।
সেখানে বিষয়টি প্রমানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিতভাবে জানানোর পর টেলিফোনে এবং সরাসরি কমলাপুর¯’ পার্সেল বিভাগে যোগাযোগ করে অতিবাহিত হয়ে যায় কয়েকদিন। ইতোমধ্যে একজন কর্মকর্তা ডকুমেন্টগুলো চেক করে জানতে পারেন পার্সেলটি টাঙ্গাইলে আছে তৎক্ষনাৎ উক্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট পোস্ট মাস্টারকে বলে দেন পার্সেলের উপর লেখা টঙ্গীর ঠিকানায় পাঠানোর জন্য। দুয়েকদিন পরই পার্সেলটি পৌছে যায় গন্তব্যে।
এই সমস্যার পিছনে কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা গেছে সদরঘাট সাব পোস্ট অফিস এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অসতর্কতা যিনি পার্সেলটি টঙ্গীর ডাকে না দিয়ে টাঙ্গাইলের ডাকে দিয়েছেন। আবার ভালো দৃষ্টান্তও বিদ্যমান যেমন ঢাকা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার রসুলপুর গ্রামে প্রায় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পার্সেল আসে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখান থেকেও পার্সেল যায়।
রসুলপুর থেকে কোন পার্সেল ঢাকা পাঠালে সাধারণত পরেরদিন তার গন্তব্যে পৌছে যায়। কিš‘ ঢাকা থেকে যখন কোন পার্সেল আসে সেই পার্সেল রসুলপুরের ঠিকানায় পৌছাতে প্রায় ৩/৪ দিন লেগে যায় আর যদি সরকারি কোন ছুটি থাকে তাহলে উক্ত ছুটিগুলো যোগ হয়। একই ঠিকানা থেকে পার্সেল ঢাকা শহরের ঠিকানায় পৌছাতে সময় লাগে ১ দিন কিš‘ ঢাকা থেকে উক্ত ঠিকানায় পার্সেল পৌছাতে ১ সপ্তাহের বেশি সময় লাগে। এ সমস্যার সঠিক কারণ চিহ্নিত করে নিশ্চয় সমাধানের জন্য সঠিক পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গ্রহন করবে।
দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির দিনে সবচেয়ে আশার খবর হলো রসুলপুরের ঠিকানায় ঢাকার দিলকূশা থেকে সম্প্রতি দুটি খোলাডাক এসেছে প্রায় ৩ কেজি ওজনের একটি সম্পাদক ফেরদৌস আহম্মদ ভূইয়া পাঠিয়েছিলেন। উক্ত পার্সেলের উপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা প্রেরকের নিকট থেকে ৩০ টাকা নিয়ে প্রেরকের সামনেই ১০ টাকার ৩টি টিকেট লাগালেও পার্সেলটি পাওয়ার সময় মাত্র ১০ টাকার একটি টিকেট সহ পাওয়া যায়। পরবর্তী পার্সেলটি কিছুটা বেশি ওজনের হলেও মাত্র ১০ টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ১০ টাকার ১ টি টিকেট সহ পাওয়া যায়। যদিও এই পার্সেলটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পৌছাতে কমপক্ষে ১০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে সাধারণত।
যেহেতু রাষ্ট্র কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয় বরং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাই রাষ্ট্র আর্থিকভাবে লাভবান না হলেও জনগনকে উপকৃত করার উদ্দেশ্যে এমন সব সেবা চালু রেখেছে।
ডাক বিভাগের অন্যতম একটি সুবিধা হলো সারাদেশে এর শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। প্রায় এক গ্রাম পর অন্য গ্রামে অর্থাৎ ২ থেকে ৩ কিলোমিটার অন্তর অন্তর ডাকঘর পাওয়া যায় সেটি শহর, নগর বন্দর বা গ্রাম যে অঞ্চলই হোক যেখান থেকে প্রান্তিক জনগন সহজেই কম খরচে সেবা গ্রহন করতে পারে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র জেলা পর্যায়ে বিদ্যমান যেখান থেকে প্রান্তিক জনগনকে সেবা গ্রহন করতে আরো প্রায় ২০০ টাকা খরচ করতে হয়। ডাকঘরের আরো সুবিধা হলো সবচেয়ে ছোট ডাকঘরেও সরকারের নিয়োগ প্রাপ্ত দুইজন লোকবল আছে একজন পোস্ট মাস্টার যিনি অফিসে অবস্থান করেন আরেকজন পিয়ন যিনি বাড়ি বাড়ি চিঠি-পত্র বা মাল-পত্র পৌছে দেন।
দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুবই অল্প খরচে পণ্য তার গন্তব্যে পৌছে এমনকি অল্প খরচে দেশ থেকে বিদেশে বা বিদেশ থেকে দেশে পণ্য বা চিঠি-পত্র বা টাকা-পয়শা আসা-যাওয়া করে। দেশের জনগনের সুবিধার্থে এই অপার সম্ভাবনার খাতটি মৃতপ্রায় অবস্থায় না রেখে দ্রুত গতিশীল করতে হবে।
গতিশীল করার জন্য প্রথমে অলস, দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ করে সৎ ও উদ্যোমী লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। দ্বিতীয়ত যেহেতু এখন মানুষের চিঠিপত্রের আদান-প্রদান হ্রাস পেয়েছে তবে অনলাইন বিজনেস সম্প্রসারণের কারণে পণ্যের আদান-প্রদান বৃদ্ধি পেয়েছে তাই পার্সেল বিভাগকে শক্তিশালীকরণ এবং সহজীকরণ করতে হবে যেন সেবা প্রত্যাশীরা সহজে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে যে কোন জায়গায় পণ্য প্রেরণ এবং গ্রহন করতে পারে। ফলে অল্প খরচে শহরের পণ্য গ্রামে এবং গ্রামের পণ্য শহরে পৌছে যাবে। অনলাইন বিজনেস আরো সম্প্রসারণ হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে শহরবাসীদের অনেকে গ্রামে বসবাস করতে উৎসাহী হবে ফলে শহর এবং গ্রামের জনসংখ্যার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি হবে।
তৃতীয়ত শুধু সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা নয় বরং সকাল ৭ টা থেকে বেলা ২ টা এবং বেলা ২ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত দুই শিফটে অফিস চালাতে হবে এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সেবা চালু রাখার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য দপ্তরও এমনভাবে চালাতে হবে। এতে সেবা প্রত্যাশীরা তাদের সুধিামত সময় সেবা গ্রহন করতে পারবেন, দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। ডাক বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং এ বিভাগের সুযোগ-সুবিধাসমুহ গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
ডাক বিভাগের প্রতি সরকারের অদৃশ্য কারণে যে অবহেলা শুরু হয়েছে সেটি অচিরেই দূরভীত করে এই অপার সম্ভাবনার খাতটি আবার দেশের আর্থসামাজিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এমন পদক্ষেপ গ্রহন করা অতীব জরুরী।